csb24.com::
১৯০৮ সালে বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী এবং শিল্পপতি অ্যান্ড্রু কার্নেগির একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন তরুণ সাংবাদিক নেপোলিয়ন হিল। শিল্পপতি ওই সাংবাদিককে এতটাই পছন্দ করেছিলেন যে, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই সাংবাদিককে তার সফলতার পেছনের যাবতীয় গোপনীয়তা ফাঁস করে দেবেন। কার্নেগি ওই সাংবাদিককে জানিয়েছিলেন একজন নিঃস্ব ইমিগ্র্যান্ট থেকে তিনি কীভাবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী হয়েছিলেন। সেই থেকে হিলের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, তিনি বিশ্বের সফল মানুষদের কাজের লক্ষ্য ও আদর্শ সম্পর্কে জানবেন।
১৯২১ সালে এই সাংবাদিক তার ‘নেপোলিয়ন হিলস ম্যাগাজিন’-এ লিখেছিলেন ‘দ্য ম্যাজিক লেডার অব সাকসেস’। ১৯৩০ সালে নিজের এই গবেষণাকে পূর্ণাঙ্গ বইয়ের আকার দিয়েছেন তিনি। টানা ১২ বছরের টানা পরিশ্রমে ১২ হাজারেরও বেশি সফল এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্বদের লক্ষ্য-আদর্শ ও কাজের পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখেছেন পৃথিবীর সব বড় মাপের মানুষের মধ্যে ১৬টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সবার মধ্যেই সাধারণভাবে পাওয়া যায়। দেখে নিন সেই জাদুকরী ১৬টি বৈশিষ্ট্য।
১. তাদের জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে : রাডার ছাড়া জাহাজ নিয়ে কোনো চালক সফলতার চিহ্ন দেখবে না বলে মনে করেন হিল। কারণ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে তা সময়ের সঙ্গে লালিত হবে এবং তা আরো অনেক অর্থবহ হয়ে উঠবে। আর এই লক্ষ্যই তাকে একটি নিখুঁত পরিকল্পনা এনে দেবে।
২. তারা আত্মবিশ্বাসী : জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। এই আত্মবিশ্বাস থাকলে অন্যরাও আপনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করবেন।
৩. তারা উদ্যোগ নেন : তারা কাজে সফলতা অর্জনের জন্য যে সব উদ্যোগ গ্রহণ করেন দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেন।
৪. তারা কল্পনাপ্রবণ : সফল মানুষদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের পেছনে তাদের কল্পনাশক্তি দৃঢ়ভাবে কাজ করে। কল্পনাই তাদের লক্ষ্য তৈরি করে দেয়। হিলের মতে, এ কারণেই বিশ্বের ৯৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জীবনে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই। আর এ কারণেই সোশাল মিডিয়ায় ৯৫ শতাংশ মানুষের ফলো করেন।
৫. তারা শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করেন : আপনি বহু সার্টিফিকেট হাসিল করতে পারেন। তবে এগুলো অকার্যকর হবে যদি না এ থেকে পাওয়া শিক্ষা জীবনে কার্যকর না করেন।
৬. তারা উৎসাহী : তারা যেকোনো কাজে ব্যাপক উৎসাহী। যেকোনো কাজে উদ্দীপনার অভাবে আপনি ব্যর্থ হবেন।
৭. তারা আত্মনিয়ন্ত্রণের চর্চা করেন : যতক্ষণ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি তার রাগ বা উত্তেজনা প্রশমন না করতে পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন না।
৮. প্রয়োজনের বাইরেও তারা যান : তারা নিজেদের চেয়েও বড় কিছুর বিপরীতে প্রতিযোগিতা করেন। একবার জয় করার পর তারা নিজেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামেন।
৯. তারা সবার কাছে পছন্দনীয় : যখন আপনি সবকিছুতে পারদর্শী এবং উৎসাহী, তখন মানুষ আপনাকে পছন্দ করবেই।
১০. তারা অতিরঞ্জিত বিষয় থেকে সত্যকে আলাদা করতে পারেন : তারা মানুষের মুখের কথা, পরিস্থিতি এবং অন্যান্য অতিরঞ্জিত বিষয় থেকে সত্যকে আলাদা করতে পারেন।
১১. তারা মনযোগী : সফলকাম মানুষরা অন্যান্য বিষয়ের পেরেশানিতে অস্থির না হয়ে নিজের কাজে দক্ষতা ধরে রাখতে সমর্থ থাকেন।
১২. তারা অটল : লক্ষ্য অর্জনের পথে যতো চ্যালেঞ্জই আসুক, তারা পিছু হটেন না। তারা লক্ষ্য অর্জনের পথে অটল থাকেন।
১৩. তারা প্রাণবন্ত : যখন আপনি উপলব্ধি করবেন যে ব্যর্থতা আসলে শিক্ষার মাধ্যম, তখন একে আপনি ভয় করবেন না। শিক্ষা অর্জনের পর আপনার শপথ হবে, আর ভুল নয়।
১৪. তারা সহানুভূতিশীল : যদিও ইতিহাসের বহু বড় বড় নেতাদের নিষ্ঠুর এবং স্বৈরাচার হিসেবে দেখা গেছে, তবুও যারা মহান নেতা হয়েছেন তারা সবাই মানবদরদি এবং সহানুভূতিশীল।
১৫. তারা পরিশ্রমী : যখন একটি কঠিন লক্ষ্য অর্জনের দিকে আপনি এগিয়ে যাবেন, তখন সেই পথে হাঁটতে আপনাকে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে। তাই সফল ব্যক্তিরা তার নিজের পথে অটল থেকে পরিশ্রম চালিয়ে যান।
১৬. তারা প্রভাবশালী হন : সাংবাদিক হিলের কাছে সবচেয়ে কার্যকর বৈশিষ্ট্য এটি। তিনি বলেন, আপনি মানুষকে সেভাবেই দেখবেন যেভাবে মানুষে আপনাকে দেখুক বলে চাইছেন। সফলতার সিঁড়ির এটাই শেষ ধাপ হতে পারে। এই গুণটি অন্য মানুষের ধ্বংসাত্মক মনোভাবকে ঠেকাতে কাজ করে। আর অন্যান্য গুণ অর্জনের পথে এই গুণের দেখা পাওয়া যায়। অন্যদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই গুণ মানুষকে তার নিজের পথে বুদ্ধিমত্তা ও গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে সহযোগিতা করে। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার
প্রকাশিত: ১৪/০৮/২০১৪ ৮:০৩ অপরাহ্ণ
পাঠকের মতামত